ভারতের আকাশে চীনের ফেরা: বিমান চলাচলে নতুন দিগন্ত
ভারতের আকাশে চীনের ফেরা: বিমান চলাচলে নতুন দিগন্ত
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা পুনরায় শুরু হতে চলেছে। এই খবর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং বিমান চলাচল শিল্পের প্রগতির একটি বড় ইঙ্গিত। ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর এবং পরবর্তীতে গালওয়ান সংঘর্ষের জেরে উত্তেজনা বাড়ায় এই পরিষেবা স্থগিত ছিল।
বর্তমানে, ভারত সরকারের "সম্পর্ককে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার" নীতির অংশ হিসেবে দুই দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে এসেছে।
বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার তাৎপর্য
এই পদক্ষেপ কেবল উড়ান পুনরায় চালু করার চেয়েও বেশি কিছু। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে দেওয়া হলো:
জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি
(People-to-People Contact): সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের জন্য দুই দেশে যাতায়াত অনেক সহজ হবে। এর ফলে দুই দেশের মানুষের মধ্যেকার সংযোগ আরও মজবুত হবে।
অর্থনৈতিক সুবিধা: সরাসরি বিমান যোগাযোগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফ্লাইট পুনরায় চালু হলে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার হবে। এর আগে যাত্রীদের সিঙ্গাপুর, হংকং বা ব্যাংককের মতো তৃতীয় দেশের হাব ব্যবহার করে যেতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল।
বিমান সংস্থার জন্য সুযোগ: ইন্ডিগো (IndiGo) এবং এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) মতো ভারতীয় বিমান সংস্থা এবং চীনের ক্যারিয়ারগুলোর জন্য এই রুটে পুনরায় যাত্রী পরিবহন শুরু করার বিপুল সুযোগ তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই ইন্ডিগো ২৬ অক্টোবর থেকে কলকাতা ও গুয়াংঝৌর মধ্যে দৈনিক নন-স্টপ ফ্লাইট শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। ভবিষ্যতে দিল্লি-গুয়াংঝৌ এবং দিল্লি-সাংহাই রুটেও ফ্লাইট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের বিমান শিল্প
যদিও ভারত ও চীন উভয়ই বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল বিমান বাজার, তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:
বাজারের আকার: যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে চীন বর্তমানে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে ভারতের বিমান শিল্পের বৃদ্ধির হারও বেশ উচ্চ।
বিমানবন্দর এবং বহর: চীনের বিমানবন্দরের সংখ্যা ভারতের চেয়ে বেশি। যদিও ভারতের বহরে বিমানের সংখ্যা চীনের চেয়ে কম, তবে নতুন বিমানের অর্ডারের সংখ্যা প্রায় একই রকম। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে ভারতের বিমান শিল্প দ্রুত প্রসারিত হবে।
সরাসরি ফ্লাইট চালু করার এই সিদ্ধান্তটি দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের বরফ গলার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। এটি প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে স্বাভাবিক করার দিকে দুই দেশই সচেষ্ট। এই প্রগতি দুই বৃহৎ অর্থনীতি এবং জনবহুল দেশের জন্য আকাশপথে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে।
আপনার কি মনে হয় এই নতুন সংযোগ দুই দেশের বাণিজ্যকে কতটা প্রভাবিত করবে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন