এই কি আমাদের পূজার আনন্দ?

এই কি আমাদের পূজার আনন্দ?

সারা দেশ যখন দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে উঠেছে, তখন বাংলাদেশের একটি কোণ থেকে ভেসে আসা এক জঘন্য খবর আমাদের সবার মনকে বিষণ্ণ করে দিয়েছে। একটি পূজামণ্ডপের কাছে একজন কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। মা দুর্গা, যিনি নারীশক্তির প্রতীক, তার আরাধনার সময় একজন নারীকে এমন পাশবিকতার শিকার হতে হলো? এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, আমাদের মূল্যবোধের চরম অবমাননা।
দুর্গাপূজা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি অংশ। এটি আমাদের শেখায় কীভাবে নারীশক্তির সম্মান করতে হয়। আমরা প্রতিমা গড়েছি মা দুর্গার, যিনি অসুরকে বধ করে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন। অথচ আজ আমাদের সমাজেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য অসুর, যারা নারীর সম্মান ও নিরাপত্তাকে পদদলিত করতে দ্বিধা করছে না। এই ঘটনা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়, আমরা কি শুধুই প্রতিমার পূজা করি, নাকি নারীর প্রতি প্রকৃত সম্মান আমাদের হৃদয়েও ধারণ করি?

এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে কেন? আইন কি তার দুর্বলতা ঢাকতে পারছে না? অপরাধীরা কি মনে করছে যে তারা কোনো শাস্তির মুখোমুখি হবে না? এই প্রশ্নগুলো আজ আমাদের সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু সরকার বা প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই, কারণ এই সমস্যা সমাজের গভীরে শিকড় গেঁথে আছে। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে, আমাদের প্রতিটি পরিবারে ছেলে-মেয়েদের শেখাতে হবে কীভাবে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখতে হয়।
আমরা যারা এই ঘটনার প্রতিবাদ করছি, আমাদের কণ্ঠস্বর যেন কোনোভাবেই নীরব না হয়ে যায়। প্রতিটি প্রতিবাদ, প্রতিটি ব্লগ, প্রতিটি লেখা এই অন্ধকারকে দূর করতে এক একটি আলোর শিখা। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। শুধু প্রতিমা নয়, প্রতিটি নারীকে সম্মান করতে শিখি। কারণ, সত্যিকারের পূজা তখনই হয় যখন আমরা সমাজে প্রতিটি নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।

এই পূজার আনন্দ আমাদের কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না আমাদের বোনেরা, মায়েরা এবং কন্যারা নিরাপদে এবং নির্ভয়ে থাকতে পারছে। এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত এবং এই কিশোরীর জন্য ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করি। এই ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, এটাই আমার মনের প্রার্থনা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ